Features সাহিত্যের রূপভেদ : রূপরীতি
সংস্কৃত সাহিত্যের শুষ্ক খাতে বাংলা সাহিত্যের তম । সমাপ্তি ও শুরুর মধ্যে সময়ের ব্যবধান কয়েক শতাব্দী, তবু প্রথমাবধি বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্যের প্রভাবাধীন থেকেই মধ্যযুগে মঙ্গল কাব্যের সীমা অতিক্রম করেছে। কল্পনার প্রাণরসে রচয়িতারা উদ্বুদ্ধ হলেও রীতি ও প্রকরণের আঙ্গিকগত সমস্যাই এক্ষেত্রে বড় কারণ। ইউরোপে কবিতা ও নাটক বিষয়ে বহু আন্দোলনে সাহিত্য জগৎ যখন বিশেষ ভাবে আলোড়িত, বাংলা সাহিত্যে তখনও চলেছে গড্ডালিকা প্রবাহ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভগীরথ মধুসূদন। বস্তুতঃ মধুসূদনে যা শুরু, রবীন্দ্রনাথে তা পল্লবিত। ক্ষুদ্রতার; সঙ্কীর্ণতার গণ্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বসাহিত্যের আঙিনায় বাংলা সাহিত্যের স্থায়ী আসন প্রাপ্তির মূলে এঁদের অবদানই সর্বশ্রেষ্ঠ। হেমচন্দ্র ও নবীনচন্দ্র পাশ্চাত্য প্রভাবকে কিছুটা আত্তীকরণ করলেও তা নেহাৎই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা।কোন দেশের সাহিত্যই স্বয়ম্ভু নয়। স্বয়ম্ভু যদি কোন সাহিত্য সম্বন্ধে প্রযোজ্য হয়, তবে তা প্রাচ্যের সংস্কৃত এবং পাশ্চাত্যের গ্রীক সাহিত্য। ইউরোপীয় সাহিত্যের বিবর্তিত ধারার মূলে যেমন গ্রীকমডেল, ভারতীয় সাহিত্যের মূলে আছে সংস্কৃত মডেল। দুই ভূখণ্ডের বিচ্ছিন্ন ধারার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই বর্তমান। সাদৃশ্য যেটুকু, তা নেহাৎই কাকতাললীয়। কালিদাস ও শেক্সপীয়রের মধ্যে আলোচনায় বঙ্কিম মৌলিক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। দুই কবি ও নাট্যকার উভয়ে উভয়কে না জানলেও মানব ও জীবনের বিশ্লেষণগত বীক্ষা সম্পূর্ণ অভিন্ন। গ্রীক ও সংস্কৃত সাহিত্যের সাদৃশ্যগত বিষয় সম্পূর্ণ মৌলিক.মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে আবির্ভূত না হলে, বাংলা সাহিত্য সঙ্কীর্ণতার গণ্ডিকে কিভাবে অতিক্রম করত— তা গবেষণার বিষয়। কল্লোলযুগে রবীন্দ্র বিরোধিতার নামে পরোক্ষে রবীন্দ্র ভাবানুসরণ শুরু হয়েছিল। প্রেমেন্দ্র মিত্র ও বুদ্ধদেব বসুরা ইউরোপীয় সাহিত্যের রীতি নীতিকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করেছেন অথচ নিজেদের সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান না করে উভয়ের মধ্যে সংশ্লেষণজাত প্রভাবকে গ্রহণ করেছেন। বুদ্ধদেব হতে বিষ্ণু দে সকলেই ইংরেজী সাহিত্যে কৃতবিদ্য। বাংলা কবিতা এঁদের হাত ধরেই বিশ্বসাহিত্যের আঙিনায় স্থিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথে যা শুরু বর্তমানে তা গগনবিস্তারী।আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে অনুধাবন করতে বিশ্ব সাহিত্যের অভিধানের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত গতি নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতির ক্ষেত্রে যে বিশ্বায়নের কথা আজ সর্বত্র আলোচিত, সাহিত্যক্ষেত্রে সেই বিশ্বায়ন ঘটেছে শতাব্দীরও পূর্বে। শুধু বাংলা সাহিত্যই নয়, ভারতীয় সব সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। ইটালী, জার্মানী, ফ্রান্স, স্পেন ও আমেরিকার সাহিত্যপ্রবাহ বিশেষ বিশেষ আন্দোলনের দ্বারা পরিপুষ্ট হয়ে ভিন্ন ভিন্নমুখী গতিতে প্রবাহিত। ইউরোপীয় দেশগুলি নিজেদের সাহিত্যের স্বকীয়তাকে বিসর্জন না দিয়েও এমন একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, যেখানে ফরাসী কাব্য কবিতা বা সাহিত্যের সঙ্গে রাশিয়ার কোন পার্থক্য নেই। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও একথা সত্য। সুনীল, নীরেন এবং জয় গোস্বামীরা এমন কোন কবিতা লেখেননি যা বিশ্বায়নের মানদণ্ডে অচল।এই গ্রন্থে সেই বিষয়টির উপরেই বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। বাংলা কাব্য কবিতা এবং নাটকের আলোচনায় ইউরোপীয় সাহিত্যকে টেনে আনা হয়েছে মূলতঃ সেই কারণেই এবং দেখানো হয়েছে যে কবি এবং কাব্যভাবনা, নাট্যকার ও তাঁর নাটক কোনটাই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোন ভুইফোড় সৃষ্টি নয়, রীতি, নীতি, আঙ্গিক, জীবন দর্শন, প্রকাশমানতা ও জীবনবীক্ষার দিক থেকে ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের কোন পার্থক্য নেই। ইউরোপীয় সাহিত্যক্ষেত্রে বিবর্তনের স্বরূপ পর্যালোচনা করে বাংলা সাহিত্যের স্থান নির্ণয় করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্য বিবর্তনের পথে বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গীভূত হয়নি। সাহিত্যিক ও কবিদের এবং নাট্যকারদের এ এক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা। তাই বিশ্ব সাহিত্যের অবয়বে বাংলা সাহিত্যের অর্ন্তভুক্তি এক ধরণের অভিযোজন। এই গ্রন্থে বাংলা কাব্য কবিতা ও নাটকের আলোচনার মধ্যে এই অভিযোজন প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।এই গ্রন্থরচনায় শ্রীমান সৌম্য চট্টোপাধ্যায় তথ্যাদি সংগ্রহ ও সম্পাদনার দুরূহ কর্মটি সম্পন্ন করেছেন। সবশেষে তরুণ প্রকাশক বিকাশ সাধুখাঁকে আমার আশির্বাদ জানাই। গ্রন্থ রচনায় যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য ও উৎসাহ দিয়েছেন—তাদের সকলের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
Secure & Private
Your data is protected with industry-leading security protocols.
24/7 Support
Our dedicated support team is always ready to help you.
Personalization
Customize the app to match your preferences and workflow.
See the সাহিত্যের রূপভেদ : রূপরীতি in Action
Get the App Today
Available for Android 8.0 and above